সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
টঙ্গীতে নারী মাদক ব্যবসায়ীসহ গ্রেফতার-২ টঙ্গীতে পা পিছলে ট্রেনের চাকায়, প্রাণ গেল পুলিশ সদস্যের হালুয়াঘাটে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল মাছ ব্যবসায়ীর হালুয়াঘাটে জলবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনপৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা হুমকির প্রতিবাদে হালুয়াঘাটে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের মানববন্ধন রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঢুকে চুরি ও মাদক ব্যবসা করতো তারা হালুয়াঘাটে বজ্রপাতে স্কুল ছাত্র নিহত আমার ভোটের হিসাব পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ: জায়েদা খাতুন গাজীপুর সিটি নির্বাচন: সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর হলেন যাঁরা গাজীপুর সিটিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হলেন যাঁরা

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড : ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার ঈদ আন্দত স্তিমিত

অনলাইন ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৭ বার

২৬ বছর ধরে বঙ্গবাজারে ব্যবসা করেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের মিজানুর রহমান। তার টিশার্ট ও গেঞ্জির সাতটি দোকানে ১৫ জন কর্মচারী কাজ করতেন। ঈদকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ মালামাল সংগ্রহে ছিল তার। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে আগুন লাগার খবরে শনিরআখড়ার বাসা থেকে ছুটে গিয়ে দেখেন বঙ্গবাজার মার্কেটের মাঝখানে ও পূর্বপাশে অল্প অল্প আগুন জ্বলছে। এরপর ধীরে ধীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। চোখের সামনে অঙ্গার হতে দেখেন রুটিরুজির সম্বল। কিছুই রক্ষা করতে না পেরে পাগলের মতো হয়ে পড়েন এই ব্যবসায়ী।
এমনটা যে শুধু মিজানুর রহমানের ক্ষেত্রে ঘটেছে তা নয়, পুরো বঙ্গবাজার এলাকার একাধিক মার্কেটের পাঁচ থেকে ছয় হাজার দোকানির একই অবস্থা। কারণ কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে, কেউ ধার করে ঈদে বেশি বিক্রির আশায় পোষাক কিনে দোকানে, গোডাউনে রেখেছিলেন। হাজার হাজার ব্যবসায়ীর মধ্যে অল্প কয়েকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামান্য কিছু সম্পদ রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকিরা চোখের সামনে আগুনে পুড়তে দেখেছেন বেঁচে থাকার সম্বল।
শুধু ব্যবসায়ী নয়, এসব দোকানের হাজার হাজার কর্মচারীও শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন। কারণ সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে জীবন চালালেও ঈদের আগে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। আবার কবে দোকানি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন, আদৌ পারবেন কিনা ব্যবসা শুরু করতে তাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের মাথায়।
এ তো গেল ক্ষতিগ্রস্ত দোকানি আর তার কর্মচারীর কথা। অনেকে আবার পাইকারি মাল নিতে অগ্রিম টাকা দিয়ে দোকানে মালামাল রেখেছেন। অনেক সময় যা কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সে মানুষগুলোরও পথে বসার অবস্থা। তাই দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য থেকে অনেকটা স্পষ্ট যে, কম করে হলেও ২০ হাজারের বেশি পরিবারে সরাসরি প্রভাব ফেলবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সর্বনাশা আগুনে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঈদের স্বপ্ন পুরোপুরি ফিকে হয়ে গেছে। বহু মানুষের জীবনে আর ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবেন কিনা তাও সন্দিহান।
অবশ্য এই মুহুর্তে কি পরিমাণ মানুষের জন্য হঠাৎ বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুন তা সুনির্দিষ্ট করে বলা পুরোপুরি অসম্ভব।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন মঙ্গলবার রাতে বলেন, ৫০ হাজারের বেশি লোক তো কাজই করত। কত মানুষ, কত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো তা এই মুহূর্তে বলা অসম্ভব। তবে আপনি নিশ্চিত থাকেন এই সংখ্যাটা অনেক অনেক বেশি।
যদিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবাজারের আগুনে যে ৫-৬ হাজার লোকের দোকান গেছে, তাদের প্রত্যেকটা দোকানে ৬ জন করে হলেও মোট ৩৬ হাজার লোক চাকরি হারাল। এর সঙ্গে প্রত্যেকের পরিবার আছে। সবমিলিয়ে নির্ঘাত ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বঙ্গবাজারের পাঁচটি মার্কেটের মধ্যে চারটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এই মার্কেটে দেশি-বিদেশি জিন্সের পাইকারি বিক্রি হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানে দোকানে মজুদও ছিল প্রচুর।

আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস মিনিট দুইয়েকের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেও বাতাসের মধ্যে ঘিঞ্জি ওই মার্কেটের আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের এনেক্সকো টাওয়ার এবং আরও কিছু ভবন।
মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, শুধু মহানগর মার্কেটেই ৮০০ দোকান রয়েছে। যেগুলোর বেশিরভাগই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বঙ্গ ও আদর্শ মার্কেটেই ২৩৭০টি দোকান ছিল। এখন আর কিছুই নেই।
মহানগর মার্কেটে মালিহা ফ্যাশন কর্নারের মালিক নজরুল ইসলাম দোকানে দেশি-বিদেশি জিন্সের জন্য পরিচিত। কিন্তু এখন সব পুড়ে ছাই।
বঙ্গবাজার এলাকায় এক দশক ধরে ব্যবসা করা ইকবাল হোসেন নামের একজন নিজের ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এনেক্সকো টাওয়ারের তিন তলা থেকে মালামালগুলো বের করতে পারলেও আন্ডারগ্রাউন্ডের গুদাম থেকে কিছুই বের করতে পারেননি। পানিতে তার থ্রি পিসগুলো ভিজে একাকার হয়ে গেছে।
আগুনে ৫ হাজারের মতো দোকান পুড়ে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রাথমিকভাবে এই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমরা আপতকালিন সময়ের জন্য অন্তত ৭০০ কোটি টাকা চেয়েছি। অন্যথায় মানুষগুলো পুরোপুরি পথে বসবে। করোনার চেয়েও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর হয়তো ঘুরেও দাঁড়াতে পারবে না লোকজন।
এদিকে আগুনে ক্ষতি নিরূপণ করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি নির্ধারণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ আগুন লাগে বঙ্গবাজারে। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের লাগোয়া মার্কেটে আগুন লাগার কথা ৬টা ১০ মিনিটে জানতে পেরে কয়েক মিনিটের মধ্যে অগ্নিনির্বাপন কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুনের তীব্রতা বাড়ে। একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ শুরু করে। সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীর সদস্যরা। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কার্যকরভাবে আগুন নেভাতে কাজ না করায় ভয়াবহতা বেড়েছে। এজন্য তারা ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে হামলাও চালায়। 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো খবর

Categories