দক্ষিণ কোরিয়ায় গত চার বছরে লাইসেন্সবিহীন চালকদের কারণে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ। দেশটির পুলিশ বিভাগের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অন্তত ৩২ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে যেগুলোতে চালকদের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব দুর্ঘটনার ফলে ৪১২ জন নিহত এবং প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে গিয়ংগি-দো প্রদেশের সিউল ও ইনছন অঞ্চলে। তরুণ বয়সী চালকদের মধ্যেই লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সড়ক নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ জানায়, অনেক ক্ষেত্রেই অনভিজ্ঞ ও অপ্রশিক্ষিত চালকরা বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে গাড়ি চালানো শেখেন এবং পরে লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। এতে শুধু তাদের নিজেদের জীবনই নয়, সাধারণ পথচারী ও অন্যান্য চালকদের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ে।
২০২১ সালে মোট ৩৬ হাজার ৩১৩ জন, ২০২২ সালে ৪৯ হাজার ২১৭ জন, ২০২৩ সালে ৬০ হাজার ৯০৯ জন এবং ২০২৪ সালে ৬৭ হাজার ৩৮৯ জন লাইসেন্সবিহীন চালককে ধরা হয়েছিল।
বয়স অনুসারে, ২০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এই অপরাধের প্রবণতা। যেখানে ২০২১ সালে ১১ হাজার ৪০২ জন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৪ সালে ২৮ হাজার ৮৬৪ জনে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার কঠোর ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার কারণে অনেকে তা পাশ করতে না পেরে অবৈধভাবে গাড়ি চালানো শুরু করেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত অভিযান, জরিমানা ও জেলদণ্ডের বিধান রয়েছে, তবুও প্রতি বছর এই অপরাধের হার বাড়ছে।
এদিকে, কোরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাইসেন্সবিহীন চালকদের শনাক্তে স্মার্ট সিসিটিভি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া, আগামী বছর থেকে যারা বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবে, তাদের জন্য সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান কার্যকর করা হবে।
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ট্রাফিক শিক্ষার ওপর জোর না দিলে এই প্রবণতা কমানো কঠিন হবে।
Leave a Reply