বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন

টঙ্গীতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা,নেপথ্যে মাদক না ছিনতাই ? প্রশ্ন এলাকাবাসীর ?

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • আপলোডের সময় : শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২
  • ১৮৭ বার

টঙ্গীর উত্তর আরিচপুর (হাফিজ উদ্দিন বেপারী রোড, গাজীবাড়ীর) এলাকার যুবক হাবিবুল্যা ওরফে রাজা মিয়াকে (২৬) বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর নীমতলি রেল লাইনের পাশে ফেলে যায় র্দূবৃত্তরা।
শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা রজু হয়েছে।
আব্দুল্লাহ রাজা গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার উত্তর আরিচপুরের (হাফিজ উদ্দিন বেপারী রোডস্থ গাজীবাড়ী) এলাকার মোশারফ হোসেনের পালক ছেলে বলে বলে জানা গেছে। । সে কিছুদিন পূর্ব পর্যন্ত একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। তার স্ত্রী ও ৭ মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

নিহতের মা সাদিয়া বেগম জানায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টায় তার একমাত্র ছেলে রাজা তার সাথে দুপুরের খাবার খায়। খাবার শেষ করার পর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাবু ও সুমন নামে দুজন যুবক রাজাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান। রাত ৯টার দিকে পরে একই দিন রাত ৯ টার পর রাজার স্ত্রীর মোবাইলে কল করে টাকা দাবী করা হয়। বলা হয়, রাজা মোবাইল ফোন চুরি করেছে। তাকে স্টেশনরোড পুলিশ বক্সের পাশে আটকে রাখা হয়েছে, টাকা নিয়ে সেখানে যেতে বলে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি।

রাজার স্ত্রী নাহার বলেন, মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ষ্টেশন রোড মোড়ে ট্রাফিক বক্সের পাশে গিয়ে দেখি রাজাকে মোবাইল চুরির অভিযোগে ৬/৭ যুবক হাত-পা বেঁধে মারধর করছে। এ সময় রাজা পানি খেতে চাইলেও তাকে পানি খেতে দেয়া হয়নি। অজ্ঞাত ওই যুবকরা মোবাইলের ক্ষতিপূরণ বাবদ আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকার ব্যবস্থার জন্য আমি তাদের কাছে ১০ মিনিট সময় চাইলে তারা রাজাকে একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে আব্দুল্লাহপুরের দিকে চলে যায়। এরপর থেকে সারা রাত খোঁজাখুজির পরও রাজার কোন খোঁজ খবর না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসি।

শুক্রবার সকালে উল্লেখিত স্থানে লাশ পড়ে থাকতে দেখে পথচারীরা টঙ্গী পূর্ব থানায় খবর দিলে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন। এরপর বিষয়টি জানা জানি হলে, সনাক্ত করা হয়, অজ্ঞাত ওই যুবকের লাশটি উত্তর আরিচপুরের বাসিন্দা মোশারফ হোসেনের ছেলে রাজার। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজার পরিবারেরর লোকজন লাশ সনাক্ত করেন। পরে ময়না তদন্ত শেষে রাজার লাশ টঙ্গীর উত্তর আরিচপুস্থ গাজীবাড়ি জামে মসজিদে নিয়ে জানাযা শেষে মরকুন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে এলাকায় বিষয়টি জানা জানি হলে, শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিভিন্ন লোকমুখে জানা যায়, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ টঙ্গী পূর্ব থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শাওন ইসলাম বাবু ওরফে ভান্ডারী বাবু এবং তার বন্ধু সুমনসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন মিলে বৃস্পতিবার দুপুর ৩ টার দিকে রাজাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর সে আর ফিরে আসেনি।

অপরদিকে, মো. শাওন ইসলাম বাবু ওরফে ভান্ডারী বাবু স্থানীয় প্রভাবশালী একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সহযোগী এবং টঙ্গী পূর্ব থানা শাখাধীন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাধে টঙ্গী এলাকায় অতি চাতুরতার সহিত মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবী করেন। ফলে, ভান্ডারী বাবু বা সহযোগীদের সাথে আব্দুল্লাহ রাজার সাথে মাদক ব্যবসার টাকা লেনদেন সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে ভান্ডারী বাবু এবং সুমনসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন বন্ধু মিলে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে এবং পিটিয়ে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত করতে পারে বলেও স্থানীয় অনেকের ধারনা।
এছাড়া স্থানীয়রা অনেককেই জানায়, বাবু এক সময় মাদকাসক্ত ছিলো, বিয়ের পর সে অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। তার বাবা মোশারফ হোসেন এবং মা সাদিয়া বেগমের কোন সন্তাননাধি না হ ওয়ায় বা না থাকায় ৭ মাস বয়সে রাজাকে পোষ্য নিয়ে লালন পালন পূর্বক বড় করেন। বড় হয়ে বিষয়টি রাজা জানতে পেরে এবং নিজেকে সামলাতে না পেরে মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। পরে রাজার পালক মাতা এবং তার আত্বীয় স্বজনরা মিলে তাকে বিয়ে করালে তার সংসারে এক সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর রাজা নিজেকে সামলিয়ে মাদক সেবন এবংঅপরাধ জগৎ থেকে নিজেকে ঘুছিয়ে নেয়।

পুলিশ জানায়, নিহতের শরীরে অজস্র আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে এটা বুঝাই যায়। তবে কেনো, কি কারণে এ হত্যা কান্ড সংঘটিত করা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। খুব শীঘ্রই হত্যার আসল রহস্য উৎঘাটন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গী থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, শুক্রবার সকালে আমরা রাজা নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি। তার সাড়া শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমিনুল ইসলাম বাবু নামে একজনকে সন্দেহজনক ভাবে প্রাথমিক জিগ্গাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে সক্ষম হবো এবং হত্যার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

আমাদের সাথেই থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো খবর

Categories