শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার বাওরসহ জেলার আরও অন্তত ২০টি জলাশয়ে শতাব্দীরও বেশি সময় থেকে শীতের শুরুতেই আসতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রায় ২৫ প্রজাতির মনোরম পরিযায়ী পাখি। পাখিদের কলরবের সুধা ও সৌন্দর্যে সকাল বিকেল মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে বিমোহিত হয় দর্শণার্থীসহ এলকাবাসী। তবে আশপাশের কিছু অসেচতন মানুষের বাওর দূষণ ও ভরাটের কারণে দিনে দিনে কমছে অতিথি পাখির সংখ্যা। তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং সরকারি বেসরকারি বিভাগসহ সকলকে সাথে নিয়ে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে জীববৈচিত্র রক্ষা করে পরিবেশকে সমৃদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল।
তুলাসার গ্রামের মোতালেব ঢালী (৬৫) বলেন, প্রায় ১২ একর এলাকাজুড়ে এ বাওরে অতিথি পাখিদের আগমনই জানান দিত শীতের বার্তা। শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে পাখিদের আগমন। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে এখানে দেখা মিলে সর্বোচ্চ সংখ্যক পাখি। এসময় সকাল সন্ধ্যা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনতে প্রকৃতি প্রেমী মানুষের ভিড় জমে। আবার চৈত্র মাসের শেষের দিকে পাখিরা এখান থেকে সুদূরে নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়। আমি বুঝতে শেখার পর থেকেই দেখে আসছি এ অতিথি পাখিদের মিলন মেলা। তবে ইদানিং শিকারীদের কোন দৌরাত্ম না থাকলেও আশপাশের মানুষের অসচেতনতার ফলে দূষণ ও ভরাটের কারণে বিনষ্ট হচ্ছে বাওরের পরিবেশ। ফলে ধীরে ধীরে কমছে পাখির সংখ্যাও। তাই অভয়াশ্রম নিশ্চিত করে পাখিদের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি।
শরীয়তপুর বিশিষ্ট কবি মির্জা হযরত সাইজি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি তুলাসরের এ বাওরটি। শীতের সময় সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রকৃতির বন্ধু এ পাখি বাওরে এসে আমাদেরকে শুধু আনন্দ বিলাসেই ভাসায় না জীববৈচিত্রের মিলনমেলায় নান্দনিক সৌন্দর্য ও কিচিরমিচির আওয়াজে মুখরিত করে পরিবেশকে করে তুলত সমৃদ্ধ। কিন্তু আশপাশের কিছু অসেচতন মানুষের পরিবেশ দূষণ ও ভরাটের কারণে বছরে বছরে কমছে পাখির সংখ্যা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে পরিযায়ী বন্ধু পাখি যেমন আমাদের সৌন্দর্যের ক্ষুধা মিটাবে তেমনি পরিবেশও হয়ে উঠত নির্মল।
শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, শীশ মৌসুমে তুলাসার বাওরসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশের বন্ধু অতিথি পাখিদের কলরব ও অবগাহন শৈলী সৌন্দর্যপিপাসুদের মন ভরিয়ে তোলে। পাখিরা শুধু আমাদের আনন্দেই ভাসায় না পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভুমিকা পালন করে। তাই পরিযায়ী পাখিদের আগমন ও অবস্থান নিরাপদ রাখতে আমরা সকলে মিলেমিশে কাজ করব। সকল সীমাবদ্ধতা দূর করে আবার তুলাসার বাওরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে আবার পরিযায়ী পাখিদের মিলনমেলায় আমাদেরকে সমৃদ্ধ করবে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, তুলাসার বাওরটি আমাদের জেলার জন্য একটি সুন্দর ও মনোরম স্থান। বাওর দূষণ কিছু জায়গা ভরাট হয়ে যাওয়ায় অতিথি পাখির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আইনি জটিলতা দূর করে দখলমুক্ত ও দূষণমুক্ত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছি। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ স্থানটিকে কেন্দ্র করে একটি আর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আশা করছি আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পর্যটকদের জন্য এটিকে একটি নান্দনিক পরিবেশ উপহার দিতে পারব।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলায় জীববৈচিত্র অত্যন্ত সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুলাসার বাওরসহ জেলার অন্তত ২০টি স্থানে শীতের অতিথি পাখিরা কলকালীতে মুখরিত করে জেলাবাসীকে শত ব্যস্ততার মধ্যেও এনে দেয় প্রাকৃতিক প্রশান্তি। তাই জেলার সব সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সমন্বিতভাবে ভরাট বন্ধ ও দূষণমুক্ত করে পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম নিশ্চিতে যা যা প্রয়োজন তাই করব।
Leave a Reply