আমি গোয়া ভ্রমনে উৎসাহিত করছি না, শুধু ভ্রমণ পিপাসুদের সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করে তাদের কিছুটা সাহায্য করার চেষ্টা করছি। তবে আমি চাই সবাই বেশি বেশি বিদেশ ভ্রমন করুক কারণ এতে মানুষের মন প্রসস্থ হয়, ভিন্ন কালচারের মানুষের প্রতি ঘৃণা সরে গিয় ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। নিজের দেশকে, সমাজকে সুন্দর করে সাজানোর অনুপ্রেরনা পাওয়া যায়, পাওয়া যায় নতুন নতুন তথ্য ভান্ডার।
যারাই বিদেশে ভ্রমণ করবেন সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে সব সময় নিজ দেশের সৌন্দর্য বিদেশীদের কাছে তুলে ধরবেন, বাংলাদেশ ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানাবেন। সর্বদা সবার সামনে মাথা উঁচু কর চলবেন, নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে দেশকে সুন্দর ভাবে প্রেজেন্ট করবেন।
ঢাকা থেকে সব চেয়ে কম খরচে কিভাবে গোয়া ভ্রমণ করা যায় তার এক্টা খসড়া তৈরি করা যাক। আগেই বলে নেই, অতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একা একা ভ্রমনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই প্ল্যান তৈরি করছি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপ্স। ভ্রমণে কখনো এসি বাস কিংবা হোটেল খোঁজবেন না। দামী ফাস্টফুড জাতিয় খাবার খুঁজবেন না। ইমার্জেন্সি ঔষধপত্র যেমন: ডায়রিয়া, জ্বর, স্যালাইন,বমি ইত্যাদির ঔষধ পত্র সাথে নিবেন। কিছু শুকনো খাবার বিস্কিট, ড্রাই কেক জাতীয় পছন্দ মত খাবার সাথে রাখবেন।
ঢাকা থেকে ননএসি যে কোন বাস সার্ভিস বেনাপোল পর্যন্ত ৫০০ টাকা। ইমিগ্রেশনে ল্যান্ড ফি ৫০০ টাকা। বর্ডার পার হয়ে বাংলা টাকা ভাংগিয়ে রুপী করে নিবেন। বাংলার পাঁচ হাজার টাকায় ৪০০০ রুপী পাবেন। কিংবা ডলার ভাংগাবেন। ডলার কলকাতা শহরে গিয়েই ভাঙ্গান ভালো। বর্ডার পার হয়ে অটো তে বনগাঁও রেলস্টেশন ৩০ রুপী। (সময় ২০ মিনিট) বনগাঁও থেকে লোকাল ট্রেনে কলাকাতা ২০ রুপী। (সময় ২.৩০ মিনিট) কলকাতা পর্যন্ত খরচ ১০০০ টাকা ও ৫০ রুপী। কলকাতা পৌছে যদি শরীরে যথেষ্ট শক্তি থাকে তাহলে কলকাতা থাকার দরকার নেই, আসল সফরের জন্য রওনা হতে পারেন। কলকাতা শিয়ালদাহ স্টেশনে পৌছে বের হয়ে হ্যাভি করে খেয়ে নিবেন। ৭০/৮০ রুপিতে পেট ভরে খেতে পারবেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে লোকাল বাসে চলে যাবেন হাওড়া রেল স্টেশনে। স্টেশনে পৌছে ইনফরমেশন উইন্ডোতে খুঁজ নিবেন গোয়ার ট্রেন কয়টায়। সপ্তাহের প্রতিদিনই কয়েকটা ট্রেন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছেড়ে যায়। ইনফরমেশন নিয়ে চলে যাবেন কারেন্ট টিকিট কাউন্টারে। সেখান থেকে জেনারেল টিকিট কাটবেন। জেনারেল টিকিট গোয়া পর্যন্ত নিবে ২৮০ থেকে ৩০০ রুপী পর্যন্ত। সময় লাগবে ট্রেনের অনুপাতে ২৮ ঘন্টা/ ২২ ঘন্টা/ ৩৬ ঘন্টা।
নোট: এই জেনারেলে সফর করা কিন্তু খুবই কষ্ট সাধ্য হবে। আপনার জন্য কোন সিট রিজার্ভ থাকবে না। ট্রেন থামার সাথে সাথে হুরোহুরি করে উঠে সিট দখল করতে হবে। অনেক সময় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ভাল মত বসতেও পারবেন না। মালামাল সব সময় চোখে চোখে রাখতে হবে। সর্বপরি এক সিটে ৩২/৩৬ ঘন্টা বসে থাকতে পারবেন কি না সেটা ভেবে দেখবেন। এক সাথে পাঁচ সাত জনের গ্রুপ হলে হই হুল্লোড় করে যাবার রিস্ক নিতে পারেন। তা না হলে নয়। খাবার ট্রেনেই পাবেন। নাস্তা ৪০ রুপী। লাঞ্চ/ডিনার ৮০/১০০ রুপী। তবে আমি এই ইনফরমেশন দিলেও এই জেনারেলে সফর করা কারো জন্য সাপোর্ট করি না। আমার পরামর্শ হলো স্লিপার। স্লিপারের ভাড়া ট্রেন ভেদে ৮০০/৯০০ রুপী। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ইউজ করে কিনতে পারলে আরেকটু সস্তায় ও পেতে পারেন। ঢাকা থেকেও টিকিট কাটা যায় তবে সেটা অনেক আগে কিনে রাখতে হয়। আমার পরামর্শ হলো আপ্নি হাওড়া স্টেশনে পৌছে ফরেন চ্যুরিস্ট ব্যুরো খুঁজ করবেন। ওখান থেকে ফর্ম পুর্ন করে স্লিপারের টিকিট কাটবেন। এই অফিস থেকে টিকিট কাটলে আপ্নি ইন্সট্যান্ট টিকিট পাবেন তবে ১০০/১২০ রুপী এক্সট্রা চার্জ করবে। টোটাল ১০০০ রুপীতে হয়ে যাবে। স্লিপারে আপ্নি শুয়ে যেতে পারবেন, মোবাইল চার্জের সুযোগ পাবেন, ওয়াশরুম পাবেন। আপনার ট্রেন চলতে থাকুক চলুন আমরা হিসেব করি কত টাকা খরচ হলো। কলকাতা পর্যন্ত ১০০০ টাকা সমান সমান ৮০০ রুপী। প্লাস ৩০০ রুপী। ৮০০+৩০০= ১১০০ রুপীতে পৌছে গেলেন গোয়া।
আপনাকে বুঝতে হবে যে গোয়া কিন্তু কোন সমুদ্র সৈকতের নাম নয়, এক্টা স্টেটের নাম। কাজেই গোয়া নেমেই ভাববেন না গন্তব্যে চলে আসছেন। গোয়ার রাজধানীর নাম ‘পিনাজী’। গোয়ায় অনেকগুলো বিচ রয়েছে এবং একটি বিচ আরেকটি থেকে অনেক দুরে। কাজেই গোয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হবার আগেই গুগল করে ছবি দেখে, বিভিন্ন রিভিউ পড়ে নির্দিষ্ট করুন কোন বিচে যাবেন। আমার স্টাডি ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সব চেয়ে সুন্দর ও বিখ্যাত বিচ আরামেবোল। কাজেই চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে আরাম্বোল পৌঁছবেন। আপ্নি গোয়ার স্টেশন মারগাও/মাডগাও স্টেশনে নামবেন। স্টেশন থেকে বের হলেই ট্যাক্সি পাবেন। কিন্তু ট্যাক্সি ভাড়া অনেক বেশী। ১৪০০/১৫০০ রুপী। শেয়ারে ও যেতে পারেন সেক্ষেত্রে ভাড়া পরবে জনপ্রতি ৩০০/৩২০ রুপী। কিন্তু ভয়ের কিছু নাই, আমি আপনাকে সহজ ও সস্তা পথ দেখাচ্ছি। আপ্নি স্টেশন থেকে বের হয়ে সোজা হাঁটা ধরবেন। দুই মিনিট হাঁটার পর এক্টা রাস্তা পাবেন। পাশেই ছোট স্টেশন আছে। স্টেশনে পাবলিক বাস থামবে। বাসে উঠে ১০ রুপী ভাড়া দিয়ে বাস স্টেশনে যাবেন। সেখান থেকে টিকিট কেটে বাস ধরবেন পানাজির। ভাড়া ৪০ রুপী। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। স্টেশনে জিজ্ঞেস করবেন মাপুসার বাস কোথায়। দেখিয়ে দিবে।
মাপুসার বাসে উঠে পরবেন। ভাড়া নিবে ১৫ রুপী সময় লাগবে আধা ঘন্টা। মাপুসা নেমে পরবেন। আপ্নি যে কোন বিচে গেলে এই মাপুসা এসেই তারপর যেতে হবে। আমাদের টার্গেট আরামবোল। মাপুসা থেকে জিজ্ঞেস করবেন আরাম্বোলের বাস কোথায়। আরামেবোলের বাসে উঠে বসবেন, নামবেন ফিস মার্কেট। ভাড়া নিবে ২০ রুপী, সময় লাগবে ৪০ মিনিট। এবার আলোচ্য বিষয় হোটেল। সারা বছর বিদেশী ট্যুরিস্ট থাকাতে এই এলাকায় প্রচুর হোটেল ও গেস হাওজ রয়েছে। বিভিন্ন দামের হোটেল পাবেন। বুকিং ডট কম থেকে রেট চেক করে বুকিং দিয়ে রাখবেন। তবে যেহেতু আমি সব চেয়ে কম খরচের হিসেব দিচ্ছি সেহেতু আমি দুইটি হোস্টেলের পরামর্শ দেবো। একটির নাম ‘আরামবোল হোস্টেল গোয়া’ আরেকটির নাম ‘হ্যাপি পান্ডব’। আমি ছিলাম আরামবোল হোস্টেলে ভাড়া মাত্র ২০০ রুপী। এই হোস্টেলের বাহিরের পরিবেশ অসম্ভব সুন্দর। একেবারে নিরিবিলি। হোস্টেল থেকে পায়ে হেটে বিচে যেতে সময় লাগে মাত্র ৮ মিনিট। হোস্টেল আগে বুকিং দিয়ে রাখবেন। হোস্টেলের দায়িত্বে আছে ‘এন্থোনি’ এটা তার নাম্বার 99201 91506। ৩৮/৪০ বছরের ইয়াং মানুষ। খুবই ফ্রেন্ডলি ও হেল্পফুল। অথবা যদি হ্যাপি পান্ডায় থাকতে চান তাহলে 96732 01979 এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। হ্যাপি পান্ডা ফিস মার্কেট থেকে ২ মিনিট সামনে, আর আরামবোল হোস্টেল পাঁচ মিনিট। আরামবোল হোস্টেলে যদি ভাড়া বেশী হয় তাহলে এন্থনিকে আমার নাম বলবেন। বলবেন হাসান বাংলাদেশ পাঠিয়েছে। আশাকরি ভাড়া বেশি রাখবে না। এবার আসুন দেখি কত খরচ হলো। গোয়া পর্যন্ত ছিলো ১১০০ রুপী। এরপর ১০+৪০+১৫+২০= ৭৫ রুপী। ১১৭৫ রুপীতে আপ্নি পৌছে গেলেন আপনার ডেস্টিনেশনে। আবার ঢাকা ফিরতে একই পদ্ধতিতে একই খরচে চলে আসতে পারবেন। সুতরাং ১১৭৫+১১৭৫= ২৩৫০ রুপীতে আপনার আসা যাওয়ার খরচ। সাথে আপ্নি যতদিন থাকবেন প্রতিদিন হোস্টেল ভাড়া ২০০ রুপী করে যোগ করুন। আর খাওয়া খরচ থালি পাবেন ওখানে ১০০ রুপীতে। আর পানি ২ লিটার ৩০ রুপী। নাস্তা ওমলেট ৩৫/৪০ রুপী। মোট কথা ১৫০/১৬০ রুপীতে আপনার ১ দিনের খাবার ভালো মত হয়ে যাবে। আপ্নি আরেকটু কম খেয়েও কিছুটা খরচ বাঁচাতে পারবেন। যাতায়াত খরচ বাদে আপনার প্রতিদিনের আবশ্যিক খরচ ২০০+১৬০= ৩৬০ রুপী। দুই রাত থাকলে ৩৬০*২= ৭২০। আনুসাঙ্গিক সব মিলিয়ে ১০০০ রুপী ধরেন। তার মানে ২৩৫০+১০০০=৩৩৫০ রুপীতে আপ্নি ঢাকা থেকে গোয়া ভ্রমণ করে আসতে পারছেন। এই খরচ জেনারেলে ভ্রমন করলে, যদি স্লিপারে যান তালে আসতে যেতে আরো ১২০০ রুপী যোগ করুন। মোট কথা: জেনারেল ক্লাস: ৩৩৫০ রুপী। (৪১৫০ টাকা) স্লিপার ক্লাস: ৪৫৫০ রুপী। (৫৭০০ টাকা) এবার হোস্টেলে বসে গুগল করে ঠিক করুন কোন কোন জায়গা ভিজিট করবেন। গোয়ার একটি মজার বিষয় হলো সেখানে মটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। ১ দিন ৩০০ রুপী, দুইজন আরামে সব জায়গায় যেতে পারবেন। তবে রাতের ডিনারটা আরামবোল বিচেই করবেন। ১৭০ রুপীতে গর্জিয়াস চিকেন বিরানি পাবেন। একেবারে সমুদ্রের কিনারে চাঁদের আলো ও মম বাতি জ্বালিয়ে এই ডিনারের কথা মনে থাকবে অনেকদিন। আপনার সুযোগ সুবিধা মত যতদিন মন চায় থেকে আসুন। বাইক নিয়ে অন্যান্য বিচ গুলোতেও ঘুরতে পারেন। ব্যাক করার সময় যেই ভাবে গিয়েছেন ঠিক সেই ভাবেই ব্যাক করুন। তবে আমার কাছে পরামর্শ চাইলে আমি বলবো গোয়া থেকে মুম্বাই ঘুরে তারপর কলকাতা আসুন। এর পরের পোস্টে মুম্বাই কম খরচে মুম্বাই ভ্রমনের কথা ও লিখবো। আমি এখন মানালি আছি, পরে মানালির ভ্রমনের প্ল্যান ও আপ্নাদের করে দেবো । ধন্যবাদ সবাইকে। কিছু মানুষের কমেন্টের ভিত্তিতে আপডেট: কিছু মানুষের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও শুধু কমন সেন্সের দোহাই দিয়ে বিষয়টি প্যাচিয়ে ফেলছে। অথচ তারা নিদৃষ্ট কোন পয়েন্টের ভুল ধরছে না, কারণ তাদের প্র্যাকটিকাল অভিজ্ঞতা নেই। তারপরও সবার জ্ঞাতার্থে বলছি: ১)এই কম খরচের সফর যারা উন্নত মানের হোটেলে থেকে অভ্যস্ত তাদের জন্য নয়। ২)জেনারেলের সফর খুবই কষ্টদায়ক হবে। আবার মানুষ সফর করছে প্রতিদিন এটাও সত্য। এজন্য আমি স্লিপার ক্লাসে ভ্রমনের পরামর্শ দিয়েছি। এবং এতেও খরচ যথেষ্ট কম। ৩)২০০ রুপীর হোস্টেলে অধিকাংশই বিদেশীরা থাকে, কাজেই পরিবেশ নিয়ে এত চিন্তার কারণ নেই। ৪)আমি যেই খরচের হিসেব দিছি সেটা একেবারে মিনিমাম হিসেব। যা না হলেই নয়। তবে কষ্ট করে এই খরচে চলে আসা সম্ভব। ৫)ধরেন বরিশাল থেকে ঢাকার ভাড়া ৪০০ টাকা, আসতে ৪০০ টাকা মোট ৮০০ টাকা। শুধুমাত্র এই ৮০০ টাকা পকেটে নিয়েই ঢাকা রওনা দেবে এমন চিন্তার মানুষ কখনো ইন্ডিয়ার গোয়া ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করবে না নিশ্চয়ই। কমপক্ষে আরো কিছু টাকা সেফ্টির জন্য রাখবে। তারপরও বলতে চাই, আমার দেয়া তথ্য অনুসারে সফরে বের হয়ে আমার কোন তথ্য বড় ধরনের ভুল পেলে আমি রেস্পন্সিবল থাকবো।
Leave a Reply