রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি রাসায়নিকের গুদাম ও তৈরি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিরপুর-৩ নম্বর রোডের শিয়ালবাড়ি এলাকায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ১৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, এখনও কেমিক্যাল গোডাউনে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ভেতরে আগুন জ্বলছে এবং সেখানকার অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে।
দুপুরের পর ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবুও হাজারো উৎসুক জনতা ও নিখোঁজদের স্বজনেরা ভবনের আশপাশে ভিড় করেন। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে আহাজারি করছেন, কেউবা হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন খোঁজে।
নিখোঁজ নার্গিস আক্তারের বোন লাইজু বেগম বলেন, ‘আমার বোন সকাল পৌনে ৮টায় কাজে আসে। আগুন লাগার পর ফোনে জানতে পারি, কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। তারপর থেকে কোনও খোঁজ নাই।
আরেকজন স্বজন ইয়াসিন বলেন, ‘আমার ভাগনি সুলতানা আর তার স্বামী জয়া, দুজনেই ভেতরে ছিল। শেষবার ফোনে জানিয়েছিল, তারা আটকা পড়েছে। এরপর আর কোনও যোগাযোগ হয়নি।
এদিকে বিকেল ৫টার দিকে নতুন করে চারটি অ্যাম্বুলেন্সকে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, আরও মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করছি, কেমিক্যাল বিস্ফোরণ থেকে বের হওয়া বিষাক্ত গ্যাসে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ভবনের ভেতর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। তাই এখন মানুষবিহীন প্রযুক্তি ও ড্রোন ব্যবহার করে তল্লাশি চলছে।
তিনি আরও বলেন, আগুনের সূত্রপাত বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নিচতলার ‘ওয়াশ সেকশন’ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং পরে পাশের কেমিক্যাল গোডাউনে ছড়িয়ে পড়ে। গুদামে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক ও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল বলে জানা গেছে।
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ তিনজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. সুরুজ (৩০), মো. মামুন (৩৫) ও সোহেল।
এদিকে নিখোঁজদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে শিয়ালবাড়ির ওই এলাকা। কেউ কারও খবর পাচ্ছেন না। মেয়ে নার্গিস আক্তারের কোনো খোঁজ না পেয়ে আহাজারি করছেন মা সুরমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আর্মি, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস কেউ কিছু বলতাছে না। মাইয়াডার কিছু হইল কি না, জানি না।
Leave a Reply