শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৬ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনার পলায়নে লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হতাশ

টঙ্গী থেকে মৃণাল চৌধুরী সৈকত
  • আপলোডের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪
  • ৪৬ বার

দলীয় নেতাকর্মীদের কাউকে কোন কিছু না বলে, না জানিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পলায়নে আওয়ামী লীগের হাজার লক্ষ নেতাকর্মী এখন জানমালের হুমকিতে পড়েছেন, রয়েছেন এক অজানা আতংকে। না জানিয়ে শেখ হাসিনার এমন পলায়নে তৃনমুল থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যন্ত হতাশ হয়েছেন তার এহেন কর্মকান্ডে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার অবৈধ নির্দেশনা মানতে গিয়ে ছাত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে পুলিশের অবস্থা এখন বিপদজনক।ভেঙ্গে পড়েছে চেইন অব কমান্ড। জীবন বাঁচাতে পুলিশ থানাগুলো থেকে পালিয়ে গেছে গোপনে।
নিজের নিয়ন্ত্রণের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সবাইকে অরক্ষিত এবং নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ফেলার এমন কান্ডে এখন ফুঁসে উঠছে লাখ লাখ আওয়ামী নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের মনের পালস বুঝতেন। আফসোস বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে কেন যে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতো মানুষের মনের পালস বুঝলেন না সেটাই বলছেন প্রবীণ আওয়ামী ঘরনার লোকজন! আর এই না বুঝা ক্ষমতার দম্ভকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা ছাত্র জনতা দেখিয়ে দিলো চোখে আঙুল দিয়ে এবার আশা করা যায় এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে পরবর্তী শাসকরা। আগামীতে যেন কোন সরকার এমন না করে তারও হুশিয়ারী আগে ভাগে দিয়ে রাখলো ছাত্র জনতার দল।
শেখ হাসিনার একঘুয়েমি অহংকার দাম্ভিকতা ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছে তার এমন সব কর্মকাণ্ডের। আওয়ামী লীগের নেতা থেকে শুরু করে তৃনমুল কর্মী সমর্থকরা পর্যন্ত আতংকে রয়েছেন। অনেকেই গা ডাকা দিয়েছেন দিবালোকের দৃষ্টি থেকে। যেসব নেতাকর্মীরা জানবাজি রেখে বিগত ১৫টি বছর শেখ হাসিনাকে আগলে রাখলো তাদেরকে কিকআউট দিয়ে দেশ ছেড়ে নিরাপদ দেশে পালিয়ে যাওয়াকে কেউ ভালো চোখে দেখছেন না। তার এমন পলায়নে সবাই হতাশ।
এখন খেসারত দিতে হবে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারা হাজারো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এমপি মন্ত্রীদের। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা অর্জন করা দল আওয়ামী লীগের মতো এমন একটি দল প্রধানের এমন সিদ্ধান্ত কেউ মেনে নিতে পারছেন ন। বঙ্গবন্ধুর অর্জনকে আগামী ১০০ বছরের জন্য তার কন্যা শেখ হাসিনা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন। আওয়ামী বিরোধী ক্ষোভের আগুন জ্বলছে সারাদেশ ব্যাপী। ক্ষোভে জ্বলতে থাকা মানুষের মনের আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার উজ্জামানের সঠিক সময়ে বলিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশবাসী।ভয়াবহ রক্তপাত এড়াতে সেনা প্রধানের এমন সিদ্ধান্তকে আমিও ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ছাত্র জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে শেখ হাসিনা জেলে গেলেও দল বিপদে পড়ত না বলে মনে করে দলটির নেতাকর্মীরা। একসঙ্গে এক ছাদের তলায় বসে দেশ শাসন করেছেন। নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে সামলে দিয়েছেন নানা রাজনৈতিক টালমাটাল আর দুঃসময়। অথচ, সেই নেত্রীই দুঃসময়ে তাদের ছেড়ে পালালেন! দলের সহকর্মীদের বিপদে ফেলে কেবল আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে ছাড়লেন দেশ। বিন্দুমাত্র আঁচ পেতে দিলেন না সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গীদেরও।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের কথা জানলে হয়তো নিজেদেরও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ পেতেন তারা! সে কথা ভেবেই এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ও মন্ত্রীরা। তারা দোষছেন শেখ হাসিনাকেই। বলছেন, ‘পদত্যাগই যদি করবেন, দেশ ছেড়ে যদি যাবেনই, তাহলে দলের নেতাকর্মীদের ওই আন্দোলনের মুখোমুখি কেনো দাঁড় করালেন?’
হাসিনা যে সোমবারই (৫ আগস্ট) পদত্যাগ করবেন এবং দেশ ছাড়বেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তার ঘনিষ্ঠ নেতামন্ত্রীরা। তার সরকারের মন্ত্রিসভার ছয় সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নেতা নিজেরাই এ কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, হাসিনা যে দেশ ছাড়বেন, তা সোমবার দুপুরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পারেন তারা। সেই খবর পাওয়ার পরেই তারা খানিক হতভম্ব হয়ে যান। তার পরেই হাসিনার মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য এবং নেতাকর্মীরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন। অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টাও শুরু করেন।
বহু মন্ত্রীর মোবাইল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকলেও রাতের দিকে অনেককেই আর ফোনে পাওয়া যায়নি। এদের অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে বা দেশের বাইরে গিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকে। যারা রয়েছেন, তারা জানিয়েছেন, জনরোষের মুখে সবাইকে ফেলে রেখে হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনায় তারা হতাশ, বিপর্যস্ত এবং ভেঙে পড়েছেন। তাদের বক্তব্য, ‘হাসিনার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং জেদের কারণে দলের নেতা-কর্মীরা বিপদে পড়ছেন। নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও বাকিদের তিনি বিপদে ফেলে চলে গিয়েছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হাসিনার মন্ত্রিসভার দুই সদস্য জানিয়েছেন, তারা গত রবিবারই হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেন। মন্ত্রিসভার আরও এক সদস্য জানিয়েছেন, পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে আন্দাজ করে পরিবারের সদস্যদের আগেই বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজে থেকে গিয়েছিলেন। তবে হাসিনা চলে যাবেন জানলে অন্যভাবে ভাবতেন। হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তার মন্ত্রিসভার আর এক প্রভাবশালী সদস্যও। তিনি বলেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর পর থেকেই সরকারের প্রধান হিসাবে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসিনা। বার বার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। তাই এখন যা হওয়ার তাই হয়েছে হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরো কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে থেকে যদি জেলে যেতেন, তাহলে হয়তো তার দলের কর্মীরা এতটা বিপদে পড়তেন না।’ বাংলাদেশের প্রাক্তন এবং প্রয়াত সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের উদাহরণ টেনে তারা বলেছেন, এরশাদ স্বৈরাচারী ছিলেন। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে যখন তার সরকারের পতন হয়, তখন তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি বরং জেলে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই উদাহরণ টেনে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের নেত্রী এমন করবেন, তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।

আমাদের সাথেই থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো খবর

Categories