জম্মু অঞ্চলের বাগলিহার ও সালাল পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে চেনাব নদীর পানি প্রবাহ রোববার থেকে সীমিত করেছে ভারত। এর ফলে নদীর পানির স্তর এতটাই কমে গেছে যে, ভাটির এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই পায়ে হেঁটে নদী পার হতে পারছেন। এমন দৃশ্য এর আগে কখনও দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। ২২শে এপ্রিল পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, চুক্তি অনুযায়ী চেনাবের পানি নিয়ন্ত্রণের আগে পাকিস্তানকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা ছিল ভারতের। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, বাগলিহার বাঁধের পাঁচটি প্রধান গেট এবং নিচে সালাল বাঁধের গেট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাগলিহার থেকে যে পানি ছাড়া হয় তা প্রথমে সালাল হয়ে চেনাবের মাধ্যমে পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। সেখানে এটি পাঞ্জাব প্রদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পানির উৎস। তবে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া- প্রথমে বাঁধের গেট খুলে পলি পরিষ্কার করা হয়, পরে তা বন্ধ করা হয়। জম্মুর আখনুরে অনেক বাসিন্দা চেনাব নদী পায়ে হেঁটে পার হয়েছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, প্রথমবারের মতো আমি চেনাব নদীর অর্ধেকটা হেঁটে পার হয়েছি। এটা অবিশ্বাস্য। নদীর পানির উচ্চতা যেখানে সাধারণত ২৫-৩০ ফুট থাকে, সেখানে এখন মাত্র ১.৫-২ ফুট। অনেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। আখনুরের বাসিন্দা বিনয় গুপ্ত বলেন, আমরা চাই না পাকিস্তানে একফোঁটাও পানি যাক। আমরা ভারতীয় সেনা ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে আছি। আরেক বাসিন্দা কমল লাঙ্গার বলেন, আমাদের সরকার পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিচ্ছে। জাতিসংঘের সাবেক সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তা ও কাশ্মীর বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লভ পুরি জানান, চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ফল। আগে অনেকেই মনে করতেন, ভারতের কাছে পাকিস্তানে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের অবকাঠামো নেই। কিন্তু এই পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে যে ভারত এখন সেই সামর্থ্য অর্জন করেছে।
এদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্সের সভাপতি ফারুক আব্দুল্লাহ আবারও সিন্ধু পানি চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এই চুক্তির কারণে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। চেনাবের পানি জম্মুতে এবং ঝেলমের পানি কাশ্মীরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা উচিত। আমরা বহুদিন ধরে বলছি, এই চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
Leave a Reply