শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২১ পূর্বাহ্ন

মার্কিন বাস্তবতা

মোহাম্মদ রুবেল, ভিয়েনা।
  • আপলোডের সময় : মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৮৬ বার

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের একটা উক্তি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমার মনে হলো। তিনি বলেছেন,আফগানিস্তান হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট সংকট। এখন প্রশ্ন হলো এই মানবসৃষ্ট সংকটের জন্য দায়ী কারা? এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে একটু পেছনে। টুইন টাওয়ার ট্রাজেডির পর তৎকালীন বুশ প্রশাসন বিন লাদেনকে হস্তান্তরের বিনিময়ে তালেবান সরকারকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি ও অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান নিয়ে দরকষাকষি করছিল। ওই সময় বুশ প্রশাসন থেকে বলা হয় আমাদের সোনার কার্পেটের প্রস্তাবটি মেনে নাও নইলে বোমার কার্পেটের নিচে তোমাদের কবর রচিত হবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরোক্ষ মদদে সেই সময় তালেবানরা মার্কিনীদের প্রস্তাব ও হুমকিকে পরোয়া না করে ঢাল তলোয়ার নিয়ে মার্কিন প্রতিরোধে নেমে পড়ে। একটা দানবীয় শক্তির সাথে কিভাবে কূট কৌশল করে নিজেকে রক্ষা করতে হয় সেটা তালেবানরা না জানলেও পাকিস্তান ঠিকই জানতো। কিন্তু তারা তা না করে আমেরিকাদের সাথে মিলেমিশে আফগানিস্তান হামলায় অংশ নেয় এবং গোপনে তালেবানদের সাথে আঁতাত করে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান বিন লাদেনকে তাদের সেনা হেফাজতে রেখে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে যে লুকোচুরি খেলেছে তার খেসারত আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে আজ দিতে হচ্ছে।
তালেবান জঙ্গি গোষ্ঠী দমনের জন্য আমেরিকা পাকিস্তান আর্মিকে বিপুল পরিমাণ ডলার দিয়েছিল। পাকিস্তান আর্মি লোক দেখানো কিছু অপারেশন করে কিন্তু তারা জঙ্গি গোষ্ঠী দমনে কোন চেষ্টাই করেনি। আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সেনাবাহিনী কানাডায় গড়ে তোলে বিখ্যাত বেগম পাড়া। শুধু তাই নয় খোদ আমেরিকাতেই পাকিস্তান সেনাবাহিনী মার্কিন অর্থে গড়ে তোলে বেগম পাড়া। সুচতুর মার্কিনীরা সরাসরি কোন প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বিন লাদেনকে পাকিস্তান সেনানিবাসে আবিষ্কার করে এবং হত্যা করে। আমেরিকা পাকিস্তানকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। ঘটনা এ পর্যায়ে শেষ হলেও মন্দ হতো না। কিন্তু, পাকিস্তান – চীন ও রাশিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে তালেবানকে আবারও রাস্ট্র ক্ষমতা নিয়ে আসে। আমেরিকা এবারও সুন্দর একটা পলিসি গ্রহন করে। তারা খুব সাধুর বেশে মিঠে মিঠে কথা বলে আফগানিস্তানের অভিভাবকত্ব চীনের ওপর ছেড়ে দিয়ে ঝামেলা মুক্ত হয়।
বর্তমান আমেরিকান পলিসি দেখলে মনে হয় তারা তালেবানদের হাতে না মেরে ভাতে মারবে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সকল প্রকার অর্থায়ন বন্ধ করাতে আফগানিস্তানে চরম দূর্ভিক্ষ চলছে। মুসলিম বিশ্ব পূর্বের ন্যায় এবারো এগিয়ে এলোনা। এখন প্রশ্ন হলো, পশ্চিমারা আফগানিস্তানকে কেন সাহায্য করবে? পশ্চিমারা সাধারণত সেইসব দেশকেই সাহায্য করে যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নিয়মগুলো অনুসরণ করে। আমরা জানি তালেবান শরিয়াহ আইনের বিষয়ে অটল। তালেবানরা পশ্চিমা বিশ্বকে মনে প্রানে ঘৃণা করে। স্বভাবত কেউই এমন শক্তিকে সাহায্য করবে না যারা তাকে ঘৃণা করে। তালেবানরা ভুলে গেছে, শরীয়াহ কায়েম করতে পারবে সেই সকল দেশ যাদের খনিজ সম্পদ আছে। যারা বৈদেশিক সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া নিজেরা চলতে পারবে। পূর্বে শরীয়াহ ভিত্তিক দেশগুলোর আয়ের উৎস ছিল বিধর্মী দেশগুলো থেকে যুদ্ধলব্দ গণিমতে মাল অথবা জিজিয়া আদায়। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় এটা অসম্ভব। এ বাস্তবতা শরীয়াহ বাদীরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল। নইলে অস্তিত্ব সংকট শুরু হবে, যা আফগানিস্তানে শুরু হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হলো আমেরিকা কেন মধ্য প্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর বিষয়ে নিরব। মার্কিনীরা তাদের স্বার্থ রক্ষা করে এমন দেশগুলোর সকল অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারহীনতায় নিরব থাকে। সম্প্রতি চীনের লবিতে প্রবেশের কারণে আমেরিকা বাংলাদেশের ওপর নিদারুণ রুষ্ট হয়েছে। এটা অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ। আমরা গায়ের জোরে অনেক কথাই বলতে পারি তবে বাস্তবতা অস্বীকার করতে পারবো না।এখনো ইউরোপের যে কোন দেশে মার্কিন মন্ত্রী পর্যায়ে কেউ আসলে প্রভূত সম্মান পায় কারণ ইয়োরোপের কর্তারা জানেন, কাকে দেবতার সম্মান দিতে হয়। বাংলাদেশের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উষ্ণ করা। কারণ নানা অভিযোগ থাকার পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর একমাত্র অর্থনৈতিক ও সামরিক অপ্রতিদ্বন্ধী পরাশক্তি। আমাদের বৃহৎ গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি সত্যি দুঃখজনক। চীন বিশ্বের সামরিক পরাশক্তি এটা সত্য, তবে আধুনিক বিশ্বে ভারতের ইতিবাচক ইমেজের কাছে চীনের অবস্থান নেহাৎ শূন্য। একজন আধুনিক মননশীল মানুষ কখনোই চীনের আগ্রাসী ও মানবতা বিরোধী নীতিকে সমর্থন করতে পারে না। ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতির বহু কারণ থাকতে পারে তবে সম্পর্কের অগ্রগতির বিকল্প নেই। একটা বিতর্কিত গণতান্ত্রিক দেশ উন্নত অগণতান্ত্রিক দেশ অপেক্ষায় শ্রেয়। আমারা যে মস্করা শালীর সাথে করতে পারবো সে মস্করা শ্বাশুড়ির সাথে করতে পারবো না। তাই হিসেব কষে কদম মোবারক চালাতে হবে।

আমাদের সাথেই থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো খবর

Categories