বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:৩৯ অপরাহ্ন

পরিস্থিতি ভালো না, আমরা এখানে নিরাপদে নেই

অনলাইন ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪
  • ৫৬ বার

মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের জেরে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে। এতে দেশটির রাজধানী বিশকেকে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। যার ফলে সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে বাংলাদেশের অন্তত ৮০০ মেডিকেল শিক্ষার্থীর।
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। তবে প্রতিবেশী দেশ উজবেকিস্তানে থাকা দূতাবাস কিরগিজস্তানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ ঘটনার পর দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে দূতাবাসটি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কিরগিজস্তানের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তানভীর মেহরাব বাংলাদেশি এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এখানকার বর্তমান পরিস্থিতি ভালো না। আমরা এখানে নিরাপদে নেই।
তিনি বলেন, হোস্টেলে স্থানীয়রা আক্রমণ করেছিল। আজকে আক্রমণ করা হচ্ছে আমরা যারা হোস্টেলের বাইরে বিভিন্ন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি তাদের ওপর। বাসায় এসে দরজাতে নক করা হচ্ছে। আমরা খাবার কিনতে নিচে যেতে পারছি না।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে স্থানীয়দের সঙ্গে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মিশরীয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। তবে ঠিক কী কারণে সংঘর্ষের সূত্রপাত, তা এখনো জানা যায়নি। এর পরই দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিশরের শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসগুলোতে হামলা চালাচ্ছে স্থানীয়রা। শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিদেশিদের মারধর ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এমনকি মেডিকেল কলেজগুলোর হোস্টেলে তারা ঢুকে পড়ছে। ছাত্রীদের হেনস্তা ও নির্যাতন করা হচ্ছে। শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, হামলায় তিন পাকিস্তানি শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সে দেশে তাদের নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে।
কিরগিজ স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটির এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সালমান ফারসী সিয়াম জানান, তারা একরকম গৃহবন্দি রয়েছেন। অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, উজবেকিস্তানের বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন তারা।
বিশকেকের রয়েল মেট্রোপলিটন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে আমি দেশে ফেরত যেতে চাই। প্রায় দুই দিন হতে চলল, না খেয়ে রয়েছি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে যখন বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু হয়, তখন থেকে আত্মগোপনে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কক্ষের বাইরে যেতে নিষেধ করেছে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাঠানো ভিডিওতে দেখা গেছে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ১৫-২০ জনের গ্রুপ করে একটি রুমের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছেন। সেখানে এক ব্যক্তিকে নির্বিচারে পেটানো হচ্ছে। একজন রাস্তায় পড়ে রয়েছেন। তবে তিনি কোন দেশের নাগরিক, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয়রা একসঙ্গে ২০-২৫টি গাড়ি করে শহরে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে।
কিরগিজস্তানের নাগরিকদের একটি দল বিদেশিদের হোস্টেলে তাড়া করেছিল, যেখানে তারা দরজায় ধাক্কা দেয় এবং টাকা নিয়ে যায়।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব হামলার ঘটনায় বাংলাদেশি শ্রমিকসহ শিক্ষার্থীরাও আহত হয়েছেন। তবে কতজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন, এ সংখ্যা কেউ দিতে পারেননি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃবিতে জানায়, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য জরুরি নম্বর (+৯৯৮৯৩০০০৯৭৮০) চালু করা হয়েছে।
দূতবাস জানিয়েছে, দেশটিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস। সরকারি তথ্যমতে, সেখানকার পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে।

আমাদের সাথেই থাকুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো খবর

Categories