২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ মাস পর্যন্ত ১ বছর ৩ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৩টি জুয়েলারিতে চুরি ও ডাকাতিতে ৪৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস)। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর মগবাজারে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ, সহ-সভাপতি এম. এ. হান্নান আজাদ, সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসান, সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন খোকন, সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপুসহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানানো হয়। এছাড়া ২০২৪ এর জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৬ মার্চ পর্যন্ত জুয়েলার্স ব্যবসায়ীদের ওপর সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনায় ক্ষোভ করেন ব্যবসায়ী নেতারা। এসব ঘটনায় সাভারে একজন নিহত ও বনশ্রীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় একজন গুরুতর আহতের ঘটনায় দায়ীদের সাজা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ব্যবসার নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি না মানা হলে বাজুস পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে সারা দেশের জুয়েলারি মালিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ৭ দফা নির্দেশনা দেয় বাজুস। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নির্ধারিত সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, স্বর্ন স্থানান্তরে পুলিশের সহায়তা গ্রহণ, নিজ উদ্যোগে পাহাড়ার ব্যবস্থা করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়। এসময় জরুরি সেবা ৯৯৯ ফোন করে সেবা না পাওয়ারও অভিযোগ করেন বাজুস নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাজুস নেতারা বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে কাজ করছে বাজুস। এই লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে দেশের প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও ব্যবসায়ীদের ওপর সরাসরি আক্রমনের ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অপহরণের চেষ্টা আমাদের জান-মালের নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি বাসা বাড়িতেও জুয়েলারি ব্যবসায়ী ও তার পরিবার নিরাপদ বোধ করছে না। এসব অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের হাতে জুয়েলারি ব্যবসায়ী হত্যাচেষ্টার ঘটনাও বাড়ছে। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাজুস। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সরকারের আরো অধিকতর সহযোগিতা চায় বাজুস। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে জুয়েলারি শিল্প ঘিরে সংঘটিত অপরাধ দমনে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করায় তাদের প্রতি আমরা ধন্যবাদ জানাই।
বাজুস নেতারা বলেন, চুরি-ডাকাতির কারণে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন। এজন্য জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের আলাদা দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সশস্ত্র পাহারার পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের সকল জেলার জুয়েলারি মার্কেটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই হওয়া অলংকার উদ্ধার এবং অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় ১৫ এপ্রিলের পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বাজুস।
সংবাদ সম্মেলনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা রোধে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ করছে বাজুস। এজন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ও বাইরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিজ নিজ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ নিশ্চিত করা, মার্কেটে অবস্থিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা মার্কেট কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিজ উদ্যোগে পাহারা নিশ্চিত করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সোনা পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেয়া, ও অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনার সম্মুখিন হলে পুলিশ প্রশাসন ও বাজুসকে জানানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
Leave a Reply