দেশব্যাপী মিনিকেট নামে চাল বাজারে বিক্রি বন্ধে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা মানচ্ছে না কোন চাল কল মালিক বা চাল ব্যবসায়ী। দেশের সকল চালের মিলে এবং চাল বাজারে এখনো সয়লাব বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট নামের চালে। সারাদেশের বাজারে মিনিকেট নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের যে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত কোনো জাত নয় বলে দাবী করেছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গাজীপুরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা এবং মাঠ পর্যায়ে জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় জানিয়েছেন, মিনিকেট নামে কোনো চাল বাজারজাত করা যাবে না। চালের বস্তার উপর অবশ্যই ধানের কি জাত, সেই জাতের নাম লিখতে হবে। বাজারজাতকৃত চালের বস্তায় অবশ্যই ধানের জাতের নাম লিখে দিতে হবে। নয়তো মিল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে মোতাবেক ইতোমধ্যে মিল মালিকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার ব্যতিক্রম হলে মিল মালিকসহ চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দেশের বিভিন্ন এলাকার চাল কল মালিকরা ব্রি উদ্ভাবিত নানা জাতের ধানের চাল অতিরিক্ত পলিশিংয়ের মাধ্যমে মিনিকেট হিসেবে বাজারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর প্রতিকার হওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিটের উদ্ভিদ ও রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আশিক ইকবাল খান জানান, মিনিকেট চাল বলতে কোন নাম নেই। এটা এক ফাঁকির নাম, ফসলের ক্ষেতে মিনিকেট নামে কোনো ধানের অস্থিত্ব নেই, সেখানে বাজার সয়লাব মিনিকেট নামের চালে। কী ভাবে মিনিকেট চাল হয়, তা ভোক্তাদের অজানা থাকলেও গত দুই দশক ধরেই খাবার টেবিলে তা শোভা বাড়াচ্ছে। কারণ এ থেকে চিকন ও সাদা ভাত হয়। এই চাল নিয়ে অসাধু ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যের ফলে একদিকে যেমন ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন, অন্যদিকে অতিমাত্রায় ছাঁটাইয়ের ফলে চালের পুষ্টিমান কমে গিয়ে তা শরীরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রতারণা ঠেকাতে ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোজাম্মেল হক জানান, চালের মিলগুলোতে অধিক পরিমাণে পলিশিংয়ের কারণে চালে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের মতো গুরত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে আজকাল মানুষ অধিকহারে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছেন। এতে শুধু ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে না বরং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবদানকে ম্লান করে দেওয়া হচ্ছে এবং বিজ্ঞানীরা তাদের উৎসাহ হারাচ্ছেন ।
ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলোর নামে বাজারে চাল প্যাকেটজাত করা হলে মিনিকেট প্রতারণা থেকে ভোক্তারা মুক্তি পেতে পারেন খুব সহজেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান, ভারতের উদ্ভাবিত শতাব্দী নামে একটি ধানের জাত কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে মিনিকেট নামে প্রণোদনা দেওয়ার পর মিনিকেটের সৃষ্টি হয়। ভারত ও বাংলাদেশে মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাত নেই। এ ব্র্যান্ডিং নামের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় চাল কল মালিক এবং ব্যবসায়ী যারা মিনিকেট চাল বলে বাজারজাত করছে তাদরে বিরুদ্ধে যথাযথ ভাবে আইনী পদক্ষেপ গ্রহন করা।
Leave a Reply