কয়েকদিনের অতিভারী বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে ওঠার সঙ্গে অন্যান্য নদীর পানি বেড়ে গিয়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
রবিবার এমন তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি রংপুর জেলার কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে (ভারতে) অতি ভারী বৃষ্টিপাতের (৯৮৯ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিনে কমতে পারে।
২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন চরাঞ্চল এবং কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। পরবর্তী দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। আগামী তিন দিন পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলার ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর বিভাগের অন্যান্য প্রধান নদী— আত্রাই, করতোয়া, পুনর্ভবা, ঘাঘট, ইছামতি-যমুনা ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি বাড়ছে, অপরদিকে টাঙ্গন নদীর পানি কমছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগের এসব নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী দুই দিন নদীর পানি কমতে পারে।
এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদ এবং ভাটিতে যমুনা নদীর পানি সমতল বাড়ছে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে এবং পরবর্তী তিন দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রাজশাহী বিভাগের গঙ্গা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও তার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি ধীরগতিতে কমতে পারে, পরবর্তী এক দিন পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী তিন দিন বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে।
রাজশাহী বিভাগের করতোয়া, আত্রাই, বাঙ্গালী ও ছোট যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। অন্যদিকে মহানন্দা নদীর পানি স্থিতিশীল এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা পরবর্তী ১ দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী এক দিন নদীগুলোর পানি কমতে পারে।
এদিকে সিলেট বিভাগের সুরমা নদীর পানি বাড়ছে, অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন নদীগুলোর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। পরবর্তী এক দিন পর্যন্ত সিলেট বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়তে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে।
মনু, খোয়াই ও ধলাইয়ের পানি কমছে, অন্যদিকে ভুলাই, সারিগোয়াইন, সোমেশ্বরী ও কংসে পানি বাড়ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন এসব নদ-নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। পরবর্তী এক দিন বাড় পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে।
আবার চট্টগ্রাম বিভাগের সাঙ্গু ও গোমতী নদীর পানি কমছ, অপরদিকে মুহুরী, ফেনী, হালদা ও মাতামুহুরীর পানি সমতল স্থিতিশীল। এসব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন পানি সমতল স্থিতিশীলই থাকতে পারে।
পরবর্তী এক দিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪-৮৮ মিলিমিটার/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা রয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, গোমতী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে। হালদা, মাতামুহুরী ও সাঙ্গুর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।
Leave a Reply