টঙ্গী গোপালপুরে ছেলেকে গলাটিপে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বুধবার দুপুরের দিকে রাজধানীর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ি এলাকার একটি কাঁশবন থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মৃত শিশুটির নাম আব্দুর রহমান মুছা (১১)। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মহিউদ্দিন মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার দত্তপাড়া ডুয়াটি গ্রামের সিরাজ মাতবদের ছেলে।
নিহত আব্দুর রহমান টঙ্গীর গোপালপুর এলাকায় জনৈক পান্নু খানের ভাড়া বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বাস করত। নিহত শিশুটি ওই এলাকার হলি ক্রিসেন্ট হাই স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করত।
এর আগে গত শনিবার নিখোঁজ ছেলের সন্ধান চেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় সাধারণ ডায়রি করেন শিশুটির মা শরিফুন নেছা। তারপর থেকেই পুলিশের একটি দল শিশুটির সন্ধানে নামে।
পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, প্রায় ১৬ বছর আগে বিয়ে হয় মহিউদ্দিন ও শরিফুন নেছার। পরে তাদের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। পারিবারিক টানাপোড়ন মহিউদ্দিন প্রবাসে পাড়ি জমান। প্রায় ৯ বছরের পর মহিউদ্দিন দেশে ফিরে প্রথম বিয়ে ও সন্তানের তথ্য গোপন করে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানার বাউনকান্দা গ্রামের সুমনা আক্তারকে। কয়েক মাস পর দ্বিতীয় স্ত্রী সুমনা মহিউদ্দিনের প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের তথ্য জেনে যায়। এতে কলহে জড়িয়ে পড়েন তারা।
পরে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রথম স্ত্রী শরিফুন নেছা ও ছেলে মুছাকে নিয়ে ফের টঙ্গীর গোপালপুর এলাকায় বসবাস শুরু করেন মহিউদ্দিন।
এর মধ্যে শনিবার বিকালে ছেলে আব্দুর রহমানকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান বাবা মহিউদ্দিন। কিছুক্ষণ পর রাজধানীর তুরাগ এলাকার একটি কাঁশবনে নিয়ে যায় শিশুটিকে। পরে সেখানে তাকে গলাটিপে হত্যা করে কাঁশবনের ভেতরে লাশটি ফেলে বাসায় চলে আসেন তিনি। বাসায় ফিরে মুছা হারিয়ে গেছে বলে সবাইকে জানিয়ে দেয়। একপর্যায়ে মহিউদ্দিন ওই বাসা ছেড়ে চলে যান ফরিদপুরে।
সাধারণ ডায়েরির সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে শিশুটির সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ বাবা মহিউদ্দিনকে ফরিদপুর জেলা থেকে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলে আব্দুর রহমানকে গলাটিপে হত্যার পর কাঁশবনে ফেলে দেওয়ার তথ্য জানায় মহিউদ্দিন। ঘটনার পাঁচ দিন পর বুধবার মহিউদ্দিনের দেওয়া তথ্যে রাজধানী তুরাগের একটি কাঁশবন থেকে শিশু আব্দুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
আব্দুর রহমানের মা শরিফুন নেছা বলেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী মহিউদ্দিনের সঙ্গে আমার কলহ চলছিল। আমার স্বামী সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমি আমার ছেলে আব্দুর রহমানকে নিয়ে টঙ্গীতে বাস করছিলাম। সেই সঙ্গে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি। গত শনিবার ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যায় তার বাবা।
টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই আরিফ হোসেন ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি এসএম মামুনুর রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহিউদ্দিনকে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হবে।
Leave a Reply