ফেসবুকে জনপ্রিয় ও বিরোধীমত ঘায়েল করতে ‘বট’ ব্যবহার করে র্যানডম মন্তব্য করানো হতো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিরোধীদলের এক হাজার ৩৬৯টি ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে এমন একটি ‘বট’ নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষকরা বলছেন, অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ২১ হাজার ২২১টি রাজনৈতিক মন্তব্য করা ৪২টি টার্গেট পেজ শনাক্ত করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজেদের ওয়েবসাইটে ‘বোকা বট: ফেসবুকে রাজনৈতিক অপপ্রচারের সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক ফ্যাক্টচেক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন গবেষক মিনহাজ আমান ও আবরার ইফাজ। আর মূল প্রকৌশলটি খুঁজে বের করেছেন এঙ্গেজমেন্ট এডিটর পার্থ প্রতীম দাস।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুক প্রোফাইলগুলো থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৯৭টি পোস্টে সমন্বিতভাবে ২১ হাজারের বেশি মন্তব্য করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন পোস্টে একই মন্তব্য করেছে। একই মন্তব্য বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা হয়েছে। বট অ্যাকাউন্ট ও এর করা মন্তব্যের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ এ গবেষণা করা হয়েছে মোট ১৯৭টি পোস্টে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।
গবেষক দলের প্রধান মিনহাজ আমান জানান, চলতি বছরের ২১ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে ‘কালার প্রিন্টারে ছাপানো প্রতিটি পৃষ্ঠায় থাকে অদৃশ্য কোড’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। সাধারণত এ ধরনের খবর রাজনীতির একনিষ্ঠ পাঠকদের মনোযোগ এড়িয়ে যায়। ডিসমিসল্যাবের এক গবেষকের চোখ আটকায় ফেসবুকে সেই পোস্টের নিচে একটি মন্তব্যে। যেখানে বলা হয়, ‘এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। আর এবার ভোট চুরি করতে পারবে না বলেই বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছে আর এত কাহিনী করছে।’
ডিসমিল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, চক্ষু রীতিমতো চড়কগাছ হয় সেই পোস্টের নিচে পরবর্তী মন্তব্যগুলো দেখে। নির্বাচনের প্রায় ছয়মাস পরে এসে ব্যবহারকারীরা তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপির সমালোচনা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল ও সুষ্ঠুভাবে হওয়ার আশাবাদ, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন আয়োজনের দাবিসহ নানা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার এতদিন পরে কেউ এমন মন্তব্য কেন করবেন, তাও আবার সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি খবরে?
এরপর শুরু হয় মন্তব্য দাতাদের শনাক্তকরণ ও গবেষণা। এ গবেষণার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সেই ফেসবুক পোস্ট থেকে প্রতিটি মন্তব্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তালিকা ধরে গুগলে সার্চ দিয়ে একই মন্তব্য রয়েছে এমন আরও ১৯৬টি পোস্ট বের করা হয়। সেসব পোস্ট থেকে আবার প্রতিটি মন্তব্য স্ক্র্যাপ করে প্রায় ৩৫ হাজার মন্তব্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়।
Leave a Reply