সূর্য্য কুমার ভট্টাচার্য্য (কাতু বাবু) কাতু বাবু শুধু একটি নাম নয়। একটি ইতিহাস। একটি রহস্যের নাম। জমিদার না হয়েও যিনি জমিদার। হালুয়াঘাট ফুলপুর তথা উত্তর ময়মনসিংহের একটা বিশাল জনগোষ্ঠী তাকে এক নামে চিনে। জন্ম ১৮৯৬ সালের ১১ এপ্রিল। পিতা কালী কুমার ভট্টাচার্য্য। কাতু বাবুর এতো পরিচিতির কারণ তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি, তাঁর স্কুল এবং খেলার মাঠ।
তৎকালীন সময়ে কাতু বাবুর মাঠে ফুটবল খেলেনি এমন খেলোয়াড় উত্তর ময়মনসিংহে নেই। খেলায় অংশগ্রহণ করতেন তৎকালীন সময়ের নামকরা সব খেলোয়ারগণ। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট খেলার আয়োজন হত প্রতিবছর। যতদূর জানা যায়, এই মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি ১৯৪৩ সালে।
কাতু বাবুর বিশাল বাড়িটি আজ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও ঐ বাড়িকে কেন্দ্র করে রয়েছে নানান লোকশ্রুতি। তিনি মূলত একজন প্রভাবশালী তালুকদার ছিলেন। সেইসাথে জেলা বোর্ড এবং ইউনিয়ন বোর্ডের পঞ্চায়েত ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এলাকার সমস্ত বিচার আচার এবং গ্রাম্য মাতব্বরির মূল কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। তার এই প্রভাব প্রতিপত্তির কারণেই সাধারণ মানুষ আজও তাকে জমিদার বলেই জানে।
তিনি ময়মনসিংহ সিটি স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন সম্পন্ন করেছিলেন। শাকুয়াই তথা উত্তর ময়মনসিংহের একজন শিক্ষা অনুরাগী, প্রভাবশালী এবং খেলাধুলা প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ১৯৪১ সালে কবি ও সঙ্গীত সাধক মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্যসহ কয়েকজন অগ্রসর মানুষের সহযোগিতায় কালী মন্দির ভেঙে একরাতে প্রতিষ্ঠা করেন শাকুয়াই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। সেইসময় মন্দির ভেঙে স্কুল করা কোন সহজসাধ্য কাজ ছিলো না। হালুয়াঘাটের দক্ষিণ এলাকার শিক্ষা বিস্তারে শাকুয়াই স্কুলের জুড়ি নেই।
তাঁর বাড়িতে হাতি, ঘোড়া, পাইক, পেয়াদা সবই ছিলো। তবু সময়ের স্রোতে আজ সবই বিলীন। তবু রয়ে গেছে কীর্তি। স্কুল, খেলার মাঠ আর ছোট্ট অথচ সুন্দর সুনই বিল। আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে চলেছে শাকুয়াই এলাকায়। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন পাস হওয়ার পূর্বেই ১৯৫৩ সালে কাতু বাবু চলে যান পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাদকুল্লা নামক স্থানে। ১৯৯৪ সালের ১২ মে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
সূত্র : স্বজন সংবাদ, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। ছবি : রাজপতি ভট্টাচার্য
Leave a Reply