শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
টঙ্গীতে ডোবা থেকে লাশ উদ্ধার ॥ গানের শিক্ষক মানসুরা আক্তার জিতুকে গলা কেটে হত্যা কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় সাগরে মাছ ধরার নৌকা ডুবে একজনের মৃত্যু পানিতে ডুবে দুই ভাইবোনের মৃত্যু ফুলপুরে পুলিশের অভিযানে মোটরসাইকেল চোর গ্রেফতার গাইবান্ধা উপজেলা পরিষদ আয়োজনে পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প ৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্রেঞ্চ বিতরন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ওপেন হাউস ডে/২৩ অনুষ্ঠিত শেরপুরে জেলা আইনজীবীর সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত বাড়ি ফেরা হলোনা ব্যাংক কর্মকর্তার গাইবান্ধায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার ৬৯ তম জন্মদিন পালিত টঙ্গীতে তমিজী হকের সম্মেলন স্থগিত: ফেসবুক স্ট্যাসের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে ঝাড়ু এবং মশাল মিছিল

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন : বিঘায় উৎপাদন ৪০ মণ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপলোডের সময় : সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১
  • ৭৬ বার

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় নতুন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান উদ্ভাবন করেছেন এক কৃষক। তিনি এ ধানের নাম দিয়েছেন ‘ফাতেমা ধান’। গেল বোরো মৌসুমে মাত্র এক বিঘা তিন কাঠা জমিতে উদ্ভাবিত ধানের চাষ করে ৪২ মণ ধান উৎপাদন করেছেন তিনি। এ ধান উৎপাদন করে অল্প সময়ে বেশ ভালো সুনাম কুড়িয়েছেন কৃষক মিলন উদ্দিন। তার উদ্ভাবিত ধানের বীজ সংগ্রহ করতে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। আশপাশের এলাকাসহ কয়েকটি জেলার কৃষকরা তার কাছে আসছেন বীজ নিয়ে যেতে। 

দুই বছর আগে ব্রি ধান ৪৯ জাতের ধানের বীজের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল এ জাতের ধান গাছ পান কৃষক মিলন উদ্দিন। তারপর এক কাঠা জমির চার ভাগের এক ভাগে এই ধান চাষ করে সাফল্য পান তিনি। মিলন উদ্দিন বলেন, আস্তে আস্তে উৎপাদন বাড়িয়ে আজ আমি এ পর্যন্ত পৌঁছেছি। ধান গবেষণার জন্য ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটে পাঠাইনি। আগামী মৌসুমে ধান পর্যবেক্ষণ করবেন বলে আমাকে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ধান আরও উন্নত করে কৃষকদের হাতে হাতে পৌঁছে দিতে বা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান মিলন।

কৃষক মিলন উদ্দিন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চক গ্রামের হাটপাড়া এলাকার মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। তিনি এইচএসসি পাস করেছেন। পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে পরে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। সরকারি আমলা কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েও তা চালাতে পারেননি। প্রথম বর্ষেই পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই কৃষিকাজ করছেন মিলন। মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন তিনি।

দরিদ্র পরিবারের একমাত্র সন্তান মিলন চাষাবাদ করে অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছেন। কয়েকবছর টাকা জমিয়ে একটি মুদি দোকান দেন তিনি। কৃষি কাজ আর মুদি ব্যবসায় ভালোই চলছিল তার সংসার। হঠাৎ স্বপ্ন দেখলেন বিদেশে গিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করবেন। সে কারণে সবকিছু বিক্রি ও দোকানটি লিজ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে দুবাই যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আবার দেশে ফিরে আসেন।

এমন দুঃখ-দুর্দশার সময় আশার আলোর দেখা পেয়েছেন মিলন। নতুন জাতের ধানে তার কপাল খুলেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার টাকার ধানের বীজ বিক্রি করেছেন তিনি। ৩৫ বছর বয়সী এ যুবক এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।

উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ধানের উদ্ভাবক কৃষক মিলন উদ্দিন বলেন, অন্যান্য জাতের একটি ধানের শীষে ১৮০ থেকে ২০০টি ধান থাকে। আর আমার উদ্ভাবিত ধানের একটি শীষে ৬০০ থেকে সাড়ে ৮০০টি ধান থাকে। দুই বছর ধরে এই ধানটি উৎপাদন করছি। প্রথমে একটি গাছে এই জাতের ধান দেখি। তারপর আস্তে আস্তে দুই বছরে এই ধানের উৎপাদন বাড়াতে থাকি। গেল মৌসুমে আমি ২৩ কাঠা (এক বিঘা তিন কাঠা) জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। ওই ২৩ কাঠা জমিতে ৪২ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। গেল মৌসুমে ধান রোপণ করেছিলাম পৌষ মাসের দিকে। গত ৪০ দিন আগে কেটেছি। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত সময় লেগেছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন।

তিনি আরও বলেন, আমার উদ্ভাবিত এই ধানের ফলন খুবই ভালো। অন্য জাতের ধানের সর্বোচ্চ ফলন হলেও প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ মণের বেশি হবে না। কিন্তু আমার এই ধান থেকে তারচেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন হবে। অন্য গাছের তুলনায় এ গাছ বেশ শক্ত, লম্বা ও মোটা। রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এই জাতের ধান যদি সম্প্রসারণ করা হয়, সারাদেশে যদি এই জাতের ধান চাষ করা শুরু করা হয়, তাহলে ব্যাপক ফলন হবে। সরকারকে আমার উদ্ভাবিত ধানের জাতের সম্প্রসারণের অনুরোধ জানাচ্ছি। 

মিলন বলেন, স্থানীয়ভাবে আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন জেলার অনেক কৃষক আমার কাছ থেকেই বীজ সংগ্রহ করেছেন। আগামী মৌসুমে তারা নতুন জাতের ধান রোপণ করবেন। মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার অনেক কৃষকের আমার কাছে থেকে ধানের বীজ কিনে নিয়ে গেছেন। গেল মৌসুমে উৎপাদিত ধান বীজ হিসেবে বিক্রি করছি। প্রতি কেজি ধানের বীজ ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ মণ ধান বিক্রি ও উপহার হিসেবে বিতরণ করেছি। প্রায় ৬০ হাজার টাকার ধানের বীজ বিক্রি করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রায় ১০ কেজির মতো ধান সিদ্ধ করে চাল করেছিলাম। সেই চাল থেকে রান্না করা ভাত খেয়েছি। ভাতটা খুবই ভালো মানের,  সুস্বাদু এবং রান্না করলে ভাতও বেশি বাড়ে। খুব চিকন চাল। আমি কাছের অনেক মানুষকে এই ধান উপহার দিয়েছি। ভাত খাওয়ার পর সবাই বলছে খুব ভালো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই জাতীয় আরো খবর

Categories