সকালে ঘুম থেকেই উঠেই প্রথমেই যে খবর টি পড়তে বা শুনতে হয়, তা হল দূর্ঘটনা ( এক্সিডেন্টে)। এর জন্য বেশির ভাগই দায়ী করা হয় ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক, রিক্সাসহ ট্রলী,ড্রামট্রাক এবং সিএনজি।
প্রতিদিন কোন না কোন রাস্তায় এক বা একাধিক দূর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। যার ফলে প্রতিদিন মৃত্যু না হয় পুঙ্গ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় অত্র এলাকার কাউকে না কাউকে। এতে করে দূর্ঘটনায় কবলিত অধিকাংশ ব্যক্তির পরিবার চরম বিপাকে পরে। স্বজন হারানো বেদনা, সেই সাথে পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন অনেকেই।
হাসপাতাল এবং প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বিগত এক মাসে হালুয়াঘাটে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক, রিক্সাসহ ট্রলী দূর্ঘটনা ঘটেছে প্রতিদিন গড়ে ৫/৬ টি। তার মধ্যে উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছে প্রায় ৩০০/৩৫০ জন। মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে ময়মনসিংহ বা ঢাকাতে প্রেরণ ও পুঙ্গত্ব বরন করেছে প্রায় শতাধিক মানুষ। যার মধ্যে মৃত্যু বরন করেছে দুই থেকে তিনজন। এই দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করে, দিন দিন যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যাতিরেখে যেনতেন ভাবে ( লাইসেন্স বিহীন) রাস্তায় যানবাহন ছেড়ে দেয়া, রাস্তার তুলনায় বেশি যানবাহন চলাচল , অদক্ষ চালক ( লাইসেন্স বিহীন) শিশু ও অতি বয়স্ক চালক দিয়ে যানবাহন পরিচালনা করা, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে না জানা ইত্যাদি দায়ী।
এমনও দেখা যায়, একই ইজিবাইক বা রিক্সা তিন বা চার জনে চালানো, সকালে বাবা দুপুরে ছেলে, বিকাল বা সন্ধ্যায় নাতি, রাতে পিতা বা ভাই, কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, নেই বয়সের বালাই। এ ক্ষেত্রে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নেই কোন বিধিনিষেধ। নেই প্রশাসনের কোন ভূমিকা।
সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক অ- প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে এবং ৭০ উর্দ্ধব্যক্তি বিভিন্ন অজুহাতে এসব যানবাহন চালাচ্ছে দেদারচ্ছে। যাদের নিজেকে রক্ষার শক্তিই নেই, সে কি করে এসব পরিবহনে থাকা ৮/১০ জন যাত্রীর জীবন রক্ষা করবে। এর জন্য অনেকেই প্রশাসন বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া য় স্বজনপ্রীতি ও উদাসীনতা কে দায়ী করছেন।
হালুয়াঘাট পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরে পৌরসভা থেকে লাইসেন্স নিয়ে ছিল ৩০০টি যান, এ বছর রাস্তায় যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও লাইসেন্স গ্রহনকারীর সংখ্যা মাত্র ১০০টির মত জুলাই/২৩ পর্যন্ত। এর জন্য চালক ও মালিকরা পৌরসভা ও বিভিন্ন সমিতিকে দায়ী করছে। তারা বলেন একটি গাড়ী লাইসেন্স করতে গেলে পৌরসভাকে দিতে হয় প্রায় ২৫০০ টাকা, কোন কোন সমিতিকে দিতে হয় ২০০/৫০০ টাকা। একটি লাইসেন্স করতে একসঙ্গে এত টাকা জোগাড় করা অনেক মালিক বা চালকের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা, ফলে লাইসেন্সের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে অবৈধভাবে রাস্তায় নেমে পড়ছে এসব যানবাহনের মালিক এবং চালকরা। এ ছাড়াও যথাযাথ পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় যেখানে সেখানে যাত্রী উঠা নামা করতে হয়। ফলে দেখা দেয় যানজট, তেমনি দূর্ঘটনার সম্ভবাবনাও দেখা দেয়। ইতিপূর্বে পৌরসভা ও পুলিশ প্রশাসন যৌথ ভাবে বিভিন্ন সময়ে নামমাত্র কাজ শুরু করলেও সেটা রহস্যজনক কারণে সাময়িক। ফলে দু’এক দিন ঠিক থাকে পরে আবার একই চিত্র চোখে পড়ে। গত ২২ আগষ্ট/২৩ সোমবার সকালে দঃ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রাস্তা পার হতে গেলে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইমাম গাড়ীর পিছন থেকে হঠাৎ করে আশা অটোরিক্সা সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে। এতে করে ঐ শিক্ষার্থী গুরতর আহত হয়। বর্তমানে । ঐ শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বিষয়টি সচেতন মহল ও ছাত্র অভিভাবকদের উদ্বেগের কারন হলে তাৎক্ষনিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞা ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজি, ও মহেন্দ্র চালকদের নিয়ে বসে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। গত ২২ আগষ্ট/২৩ মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হালুয়াঘাট পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞা নেতৃত্বে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনী সদস্যরা পৌর শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অবৈধ অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মটরসাইকেল আটক করা হয়।
মেয়রের তাৎক্ষনিক এই উদ্যোগকে সচেতন মহল স্বাগত জানিয়ে বলেন, এমন উদ্যোগ মাঝে মাঝেই করলে, সাধারন জনগন এর সুফল পাবে। দূর্ঘটনার হাত থেকে অনেকে নিরাপদ হবে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূঞা বলেন, মানুষের নিরাপত্তা, স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সবাইকে সাথে নিয়ে পৌরসভা তা করবে। তিনি এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
Leave a Reply