বকেয়া বেতন দাবী করায় হাসপাতালর ম্যানেজার এবং স্টাফকে দিয়ে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মীর স্বামী এবং শিশু বাচ্চাকে হাসপাতালে প্রায় ২৪ ঘন্টা আটকে রাখার পর উদ্ধার করা হয়েছে। এঘটনার পর রাত ১১ টায় নিজেদের প্রাণ বাচাতে এলাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালে পরিচ্ছন্ন কর্মী রিপা ও পরিবারে সদস্যরা চলে গেছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে প্রবাসী এম রহমানের বেসরকারি আল বারাকা জেননারেল হাসপাতালে স্বয়ং মালিকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ৪ মাসের বকেয়া বেতন দাবী করায় হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মী রিপার স্বামী এবং তার শিশু সন্তানকে আটকে রেখে হাসপাতালের ম্যানেজার রাফসান. অমিত এবং রিসিফশনের ইতি আক্তার হাসপাতালের কম্পিউটারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় এম রহমানে বৃদ্ধ পিতা তৈয়বুর রহমানকে ডেকে এনে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তালা কেটে তাদের উদ্ধার করা হয়। এসময় বিষয়টি জানাজানি না করতে এবং দ্রুত টঙ্গী ছেড়ে চলে যেতে রিপা এবং পরিবারের লোকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এম রহমানের পিতা । পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলেও এ ঘটনায় কেউ আটক বা কেউ কোন অভিযোগ না করায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে নির্যাতিত পরিবারটি প্রাণের ভয়ে রাত ১১ দিকে তাদের ব্যবহৃত মালাপত্র একটি মিনি ট্রাকে উঠিয়ে গ্রামের বাড়ি বরিশালের উদ্দ্যেশে চলে যেতে দেখা গেছে।
এ সময় স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টঙ্গী আল-বারাকা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত প্রায় ১৩/১৪ জন কর্মকর্তা–কর্মচারীর চার মাসের বেতন বকেয়া থাকা সত্বেও এম রহমান এবং তার বৃদ্ধ পিতাসহ তাদের তিনজন নিজস্ব স্টাফ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অন্যায় অত্যাচার এরং নির্যাতন করতো। মালিক পক্ষের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না।। এছাড়া গত ২০ আগস্ট বকেয়া বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও তা করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং গত বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের অভ্যর্থনা কর্মী ইতি আক্তারসহ ম্যানেজার রাফসান এবং স্টাফ অমিতের সহায়তায় মালিকপক্ষ গেটে তালা বন্ধ করে অফিসের কম্পিউটারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলে।
এ সময় হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করা পরিচ্ছন্ন কর্মী রিপা আক্তারের স্বামী পারভেজ ও তার চার বছরের শিশু মরিয়ম বিষয়টি দেখে ফেলায় তাদেরকে মালিকপক্ষের িনর্দেশে ভেতরে তালাবদ্ধ করে রেখে যায় বলে পরিচ্ছন্ন কর্মী রিপা জানায়। রিপা আরো জানায়, আমি হাসপাতালের বাইরে ছিলাম, ঘটনার কিছু সময় পর বাইরে থেকে ফিরে এসে দেখি হাসপাতালের গেটে তালা ঝুলছে। ওই সময় থেকে অভ্যর্থনা কর্মী ইতি আক্তারসহ সকলের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। পরে শুক্রবার দুপুরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে প্রথমে ফিরে যায়। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে খবর পাঠান। সন্ধ্যায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৈয়বুর রহমান ঘটনাস্থলে এলে উত্তেজিত কর্মচারী-কর্মকর্তারা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রয় ২৪ ঘণ্টা পর হাসপাতালের নিরাপত্তা গেটের তালা কেটে ভেতরে আটকে পড়া পরিচ্ছন্ন কর্মী রিপার স্বামী ও তার শিশুকে উদ্ধার করে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী রিপা আক্তার বলেন, আমি হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে স্বামী ও শিশু মেয়ে নিয়ে বাস করতাম। হাসপাতালটিতে কোনো ভর্তি রোগী ছিল না। বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে ভেতরে স্বামী ও শিশু মেয়েকে রেখে বাইরে যাই। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে হাসপাতালের গেটে তালা ঝুলছে। তারপর পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে ফিরে যায়। তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৈয়বুর রহমান , আমার ছেলে ডা. এম রহমান দেশের বাইরে রয়েছে। সে হাসপাতালটি দেখাশোনা করে। সে দেশে আসলে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বেতনের ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালের অভ্যর্থনা কর্মী ইতি আক্তারের সাথে যোগােযাগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
টঙ্গী পূর্ব থানা–পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ মাহাবুব আলম জানান, দুপুরে থানার ডিউটি অফিসার আমাকে বিষয়টি জানালে আমি হাসপাতালে যাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বাবা-মেয়েকে খাবার দিতে বলে আমি চলে আসি। সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষ এসে নিরাপত্তা গেটের তালা কেটে ফেলার বিষয়টি জানতে পেরেছি।
টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply