নানা আলোচনা-সমালোচনার ইতি ঘটিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নবনির্বাচিত প্রথম নারী মেয়র জায়েদা খাতুন সোমবার তার নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে এক অভিষেক ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মেয়র জায়েদা খাতুন নগরবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা লক্ষ লক্ষ ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমার আগেও আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছিলেন। এজন্য আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। তিনি নির্বাচত কাউন্সিলর ও সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সঙ্গে সেবা তথা দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজীপুর নগরবাসী আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা এবং আমার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও আধুনিক নগর নগরবাসীকে উপহার দেব। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন। পরে মেয়র নগর ভবনে গিয়ে তার আসনে বসেন। এসময় তার ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমও পাশে ছিলেন।
সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আপনারা মাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। মা বলেছেন তার জীবনবাজী রেখে আপনাদের পাশে থাকবেন, সেবা দেবেন। আপনরা জানেন নির্বাচনের প্রচারণার কাজে টঙ্গীতে গেলে তিনি বার বার বাঁধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। তারপরও তিনি থেমে যাননি।
তিনি আরো বলেন, জন্মের পর এবং বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমি সংগঠনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধত্ব করার কাজটি শিখেছি। তিনি বলেন, কেউ শহরের ক্ষতি করবেন না। এ শহর রক্ষার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কষ্ট করেছি। আবারও প্রয়োজন হলে মায়ের সঙ্গে থেকে এ সিটির জন্য কাজ করবো।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এসএম সফিউল আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আব্দুল হান্নানসহ নবনির্বাচিত কাউন্সিলরগণ মেয়র জায়েদা খাতুনের পাশে ছিলেন। সোমবার সকাল ৯টার পর হতেই গাড়িতে চড়ে এমনকি পায়ে হেঁটে তার সমর্থিত নেতা-কর্মীরা বাদ্য বাজিয়ে নেচে গেয়ে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। এক পর্যায়ে পুরো এলাকা আনন্দ মিছিলে ছয়লাব হয়ে যায় এবং লোকে লোকারণ্যে পরিণত হয়।
সোমবার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে গাজীপুর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এসএম সফিউল আজম ও নির্বাচিত কাউলিররা নতুন মেয়রকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান। এদিন তিনি নতুন মেয়রের কাছে দায়িত্বও বুঝিয়ে দেন। আগের দিন রোববার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমাপন কিরণ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জায়েদা খাতুন নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে এক চমক সৃষ্টি করেন। ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত ও মেয়র পদ হারানো সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ছেলের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র’র কারণে মা জায়েদা খাতুনও ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হন। কিন্তু ব্যাংকে জামিনদার হয়ে ঋণ খেলাপী হওয়ায় ছেলে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থীতা বাতিল হলে মায়ের সঙ্গেই ভোট যুদ্ধে নামেন জাহাঙ্গীর আলম। তখন জায়েদা খাতুন বলেছিলেন ছেলের প্রতি নগরবাসীর ভালবাসা প্রমাণ করার জন্যই তিনি ওই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নগরবাসী সেই ভালবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। এজন্য তিনি ভোটার তথা নাগরিকদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মেয়র জাহাঙ্গীরকে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গাজীপুর, নওগাঁ, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। পরে ২৫ নভেম্বর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন। সম্প্রতি তাকে আওয়ামী লীগ থেকে ক্ষমা করা হয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আবার গাজীপুর সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে দল থেকে তখন আবার বহিস্কার করা হয়।
Leave a Reply