কুমিল্লা বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় প্রতারণার অভিযোগে জমির মিয়া(৪১) নামের এক ভন্ড তান্ত্রিক বেদে কবিরাজকে আটক করেছে বাঙ্গরা বাজার থানা পুলিশ।
বাঙ্গরাবাজার থানার খামারগ্রাম এলাকা থেকে তাকে আটক করেছে। আটক জমির মিয়া সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বশির মিয়ার ছেলে। পরে তাকে প্রতারণা মামলা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাঙ্গরাবাজার থানা পুলিশের এসআই ওবায়দুল ইসলাম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বাঙ্গরাবাজার থানার খামারগ্রাম মেম্বার বাড়ির লাইলি বেগম নামে এক মহিলার বসত ঘর থেকে ৪১,০০০/- টাকা চুরি হয়ে যায়। চুরি হয়ে যাওয়া ৪১০০০/- টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য তার বাড়িতে যায় ভন্ড তান্ত্রিক বেদে কবিরাজ জমির মিয়া। সে তখন লাইলি বেগমকে জিজ্ঞাসা করে আপনার বাসায় কি কি আছে? মহিলা সরল মনে বলে আমার বাসার চার ভরি স্বর্ণ কিছু রুপা কিছু টাকা আছে। তখন বেদে কবিরাজ বলে আমার সামনে সবগুলির এনে দেন। লাইলি বেগম কবিরাজের কথামতো স্বর্ণ গয়না টাকা যা ছিলো তা এনে কবিরাজের সামনে রাখে। মহিলাকে বেদে তান্ত্রিক জমির মিয়া কবিরাজ বলে আমার সামনে তিনটা সেজদা দেন এবং তার হাতে তিনটা তাবিজ দিয়ে বলে আপনার মোবাইল বন্ধ করেন। আর তাবিজ গুলি বাড়ির তিনকোণা গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে আসেন। মহিলা একটি তাবিজ গর্তে চাপাদিয়ে পরে চিন্তা করল কবিরাজের কাছে আমার স্বর্ণ গয়না টাকা। তাবিজ গর্তের পুতে দেওয়ার জন্য বাহিরে পাঠাইলো মোবাইল বন্ধ করতে বলল দেখি কবিরাজ ঘরে আছে কিনা। ঘরে যেয়ে দেখে যে কবিরাজ ঘরে নাই। তখন বাইরে আশেপাশে লোকজনকে নিয়ে কবিরাজকে খোঁজে বাজারে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
খবর পেয়ে বাঙ্গরাবাজার থানা পুলিশের এসআই ওবায়দুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনার কাছে গিয়ে সবকিছু আলামতসহ কবিরাজ জমির মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। তখন খবর পেয়ে কুমিল্লা জেলার বেদে কমিটির সভাপতি আলাউদ্দীন ওঝা থানায় এসে তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন সে ভন্ড কবিরাজ। আটক ভন্ড কবিরাজ ঘটনার সত্যতা শিকার করে।
পরে ভূক্তভোগী লাইলি বেগমের স্বামী নূর আলম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৬/৪৮০/৩২০/৪১১ ধারা উল্লেখ করে মামলা রুজু করেন। মামলা নং-০৬, বাঙ্গরাবাজার থানা।
মামলার বাদী নূর আলম বলেন, ভন্ড তান্ত্রিক বেদে কবিরাজ জমির মিয়া আমার স্ত্রীকে বোকা বানিয়ে প্রতারণা করেছে এবং সে পুলিশি জিজ্ঞাসায় প্রতারণার দ্বায় শিকার করেছে। এই ভূয়া কবিরাজ বিভিন্ন যায়গায় এমন প্রতারণা করে আসছে। আমি তার বিচার চাই।
বেদে সর্দার কওমি মাদ্রাসা থেকে সনদপ্রাপ্ত ক্বারি আলাউদ্দিন ওঝা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ এবং জনগণকে একটি মেসেজের মাধ্যমে জানাতে চাই যে আমাদের বেদে সমাজে এরকম অনেক ভন্ড এবং প্রতারক কবিরাজ আছে যাদের কোন স্থায়ী ঠিকানা নাই এবং তাদের কোন ভিত্তিও নাই। তার জন্য সবাইকে বলতে চাই যে, আপনারা বেদে যত কবিরাজ আছে তাদের মাধ্যমে যদি কোন কাজ করাতে চান তাহলে কবিরাজের আইডি কার্ড এবং তার গ্রহণযোগ্যতা দেখে নিশ্চিত হয়ে প্রতারণার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে কাজ করবেন। বাংলাদেশে অনেক বেদে তান্ত্রিক কবিরাজ আছে যারা প্রতারণা করে মানুষকে নিঃস্ব করে। তারা বেধে সমাজকে ধ্বংস এবং কুলষিত করছে। যার জন্য ভালো বেদে তান্ত্রিক কবিরাজ গুলি এর বদনাম দুর্নাম এর দ্বায়ী হচ্ছে। আমরা বেদেরা মানুষের উপকার করি ক্ষতি করি না। সাপ ধরা মানুষের হারানো জিনিস ফিরে পেয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন গাছ গাছড়ার মাধ্যমে ইউনানী চিকিৎসা করে থাকি। কিছু প্রতারক বেদে তান্ত্রিক নামক প্রতারক কবিরাজ এর জন্য আমরা আজকে অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যা আমাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আজ বাঙ্গরাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রিয়াজুল ইসলাম প্রতারক ভন্ড তান্ত্রিক জমির মিয়া কবিরাজকে একটি প্রতারণা মামলা দিয়ে কুমিল্লা আদালতে পাঠিয়ে। এজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওসি মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাঙ্গরা বাজার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আটক কৃত আসামী ভূয়া তান্ত্রিক বেদে কবিরাজ জমির মিয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতারনা মামলা দিয়ে তাকে কুমিল্লা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply